আমি কে – এর যথাযথ উত্তর দেওয়া বড়ই শক্ত কাজ। আরে বাবা, যে প্রশ্নের উত্তর দিতে তাবড় তাবড় দার্শনিকরা হিমশিম খেয়েছেন সেখানে আমি কোথাকার কোন হনু ! কিন্তু পার্সোনাল ব্লগ যখন খুলেছি, এবং কিছু পাঠক আমার লেখা নিয়মিত পড়তে আসবেন এই ব্লগে – এমন প্রত্যাশা যেহেতু রাখছি, নিজের সম্বন্ধে অন্তত খানিকটা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা তো আমাকে করতেই হবে। অতএব আমার নিজেকে বর্ণনা করবার এই প্রচেষ্টা…
আমি একজন কানাডা-প্রবাসী বঙ্গললনা। ২০০৯ সালে এই মেপল পাতার দেশে এসে সংসার পেতেছি এবং বেশ অনেকদিন হল সপরিবারে এখানকার পাকাপাকি বাসিন্দা হয়ে গিয়েছি। পেশাগতভাবে আমি একজন কেরিয়ার কাউন্সেলর (career counsellor) বা কেরিয়ার অ্যাডভাইসর (career advisor) – যাকে বিশুদ্ধ বাংলায় বলা যেতে পারে কর্মজীবন পরামর্শদাতা/দাত্রী বা কর্মজীবন উপদেষ্টা। অবশ্য আমি যে শুধুই কেরিয়ার কাউন্সেলিং করি তা নয়, আমি একজন রেজ্যুমে রাইটারও (résumé writer) বটে। বাংলা ভাষায় এই কাজটার খুব গালভারী একটা প্রতিশব্দ আছে: কর্মজীবন-বৃত্তান্ত লেখক/লেখিকা। সহজ করে বলতে গেলে আমার কাজটা হচ্ছে কানাডার এবং আমেরিকার জীবিকাসন্ধিৎসু মানুষদের চাকরিতে আবেদন করা সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত ব্যাপারে সাহায্য করা। অর্থাৎ, তাদের জন্য রেজ্যুমে (ভারতে যেটাকে সাধারণত CV বলে রেফার করা হয়) লিখে দেওয়া (résumé writing for the purpose of job application) থেকে শুরু করে, আরো বহু বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া – মানে ঠিক কিভাবে চাকরি খুঁজলে সঠিক সুযোগগুলির সন্ধান পাওয়া সহজ হবে (job search strategy formulation), চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হবে (interview coaching), ইন্টারভিউয়ের পরেও কি কি করণীয় থেকে যায় (post-interview do’s and don’ts) ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া। শুধু তাই নয়, কানাডাতে কি কি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে কিধরণের চাকরি পাওয়া সম্ভব এই বিষয়েও আমি নিয়মিত আমার ক্লায়েন্টদের সুলুকসন্ধান দিয়ে থাকি। এইখানে ক্লিক করে আমাকে লিঙ্কডইনে খুঁজে পেতে এবং ফলো করতে পারেন।
ব্যক্তিগতভাবে ‘আমি’ মানুষটার এসবের বাইরেও নানা বিষয়ে কৌতূহল রয়েছে। মনস্তত্ব তার মধ্যে অন্যতম – বিশেষতঃ শিশু-মনস্তত্বে আমার খুবই আগ্রহ আছে। এই নিয়ে সুযোগ পেলেই পড়াশোনা করি, নানা সেমিনারে যোগদান করার চেষ্টা করি যথাসম্ভব, এই সংক্রান্ত নতুন নতুন গবেষণার খোঁজখবর রাখি যতটা পারি, এবং আমি কানাডার ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড সাইকোলজির একজন সদস্যও বটে। তাছাড়া বিজ্ঞানের, বিশেষতঃ জীববিদ্যা-সংক্রান্ত নানা বিষয়েও আমার অপরিসীম আগ্রহ আছে – এককালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জুওলজি নিয়ে স্নাতকোত্তরও (master’s degree) করেছিলাম আর আমার বিশেষ বিষয় (special paper) ছিল জেনেটিক্স – কাজেই ভেতরের বিজ্ঞান-অনুসন্ধিৎসু সত্তাটা এখনো পুরোপুরি চাপা পড়েনি বলতে পারেন।
বিজ্ঞান, মনস্তত্ব, বা কেরিয়ার সংক্রান্ত আলোচনার বাইরে টুকটাক রম্যরচনা গোছের হালকা লেখালেখিও করে থাকি মাঝেমধ্যে, তাছাড়া মাঝেসাঝে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স নিয়েও লিখি। দারুণ ভালো লেখার হাত না হলেও লেখালেখি করতে বরাবরই ভালো লাগে – অবশ্য এতদিন সেটা বেশিরভাগ সময় ইংরেজিতেই করেছি। কিন্তু নিজের দেশ এবং বাংলা ভাষা থেকে দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা দূরে থাকার জন্যই হয়ত ইদানীং বাংলা ভাষার প্রতি আবার নতুন করে একটা টান অনুভব করছি। বাংলা ভাষায় আমার এই ব্লগটা শুরু করার আরেকটা বড় কারণ হল আমার বাংলা লেখার হাতটা যত দিন যাচ্ছে ততই অত্যন্ত বিচ্ছিরি হয়ে যাচ্ছে, বা আরো চলতি ভাষায় বলতে গেলে ‘খাজা’ হয়ে যাচ্ছে। বাংলা ভাষায় লেখালেখি করার কনফিডেন্সটা যে প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে এটা বুঝতে পারলাম, বা বলা ভালো ফাইনালি শিওর হলাম, যখন জীবনের প্রথম বইটা (আমার ছোটবেলার নানা অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে একটি স্মৃতিকথা বা memoir) লেখার জন্য ইংরেজী ভাষাটাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বেছে নিলাম। যদি বইটি সম্বন্ধে কারোর কিছু জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে এই ফেসবুক পেজটিতে গিয়ে দেখতে পারেন – আমার স্মৃতিকথার বেশ কিছু অংশ ওই পেজে পোস্ট করা আছে।
তাই বলে একটুও ভাববেন না যে আমি ইংরিজিতে মহাপন্ডিত – সেটা একদমই নয়। কিন্তু মাতৃভাষায় বই লিখতে গেলে যে গুণগত মান আগাগোড়া বজায় রাখা খুবই দরকার, অ-মাতৃভাষায় সেই একই পর্যায়ের গুণগত মানটা বজায় রাখার দায় বা compulsion সবসময় আমাদের হয়তো সেভাবে থাকে না। যেহেতু আমি পেশাদার লেখক নই, এবং ইংরিজি কোনোদিনই আমার প্রথম ভাষা ছিল না – সেহেতু আশা রাখি যে ইংরিজিতে বই লেখার পর ভুলভ্রান্তি খানিকটা হয়ে গেলেও যাঁরা পড়বেন তাঁরা হয়তো মোটামুটি ক্ষমাঘেন্না করে নেবেন আমাকে। কিন্তু নিজের মাতৃভাষায় যেমনতেমন ভাবে লিখে একটি ‘খাজা’ বই নামিয়ে দিলে আমি যে নিজেই নিজের কাছে অপরাধী হয়ে যাব।
কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই মনে হল বাংলায় যদি একটা ব্লগ লেখা শুরু করি কেমন হয়? আর কিছু না হোক, নিয়মিত লিখলে একটু হলেও তো ঘষামাজা হবে ! আমার কত্তামশাই এই প্ল্যানটা শুনেই তাতে বেজায়রকম উৎসাহিত হয়ে তাড়াতাড়ি এই ব্লগটা বানিয়ে দিলেন। এবার আর আমাকে পায় কে? ভাবছি নানা বিষয় নিয়ে নিয়মিত লিখব এখানে – যাঁরা পড়বেন তাদের সুচিন্তিত মতামত পেলে ভালো লাগবে তো বটেই, তার থেকেও বেশি তৃপ্তি পাবো যদি আমার লেখা কোনো ব্লগ পোস্ট থেকে কারুর কোনো উপকার হয়।
আর কী বলি? অনেক ব্লগ-পড়ুয়া ভাইবোনদের এখানে খুঁজে পাওয়ার আশা নিয়ে আমার এই লেখাটা শেষ করছি …
ভালোবাসা সহ,
ব্লগার দিদি
Subscribe to receive notifications for our blog posts and more…