ব্লগারদিদি

January 23, 2025

ছিংঋমাচের ম্যলাইখাররি

Share This Post

আমার মা এখন কানাডায় আমার বাড়িতে আছেন। ক’দিন আগে মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার লোভে খানিকটা বাগদা চিংড়ি কিনেছিলাম। আজ মা চিংড়িমাছের মালাইকারি বানিয়েছেন। আমিও বাড়িতে এই পদটা মাঝেমধ্যে রাঁধি, কিন্তু naturally মায়ের মত হয়না। স্বভাবতই, আমার ছেলেরা আজ খাওয়ার পর একেবারে আনন্দে আত্মহারা।

“This ছিংঋমাচের ম্যলাইখাররি is so, so delicious!!”

আমার জ্যেষ্ঠপুত্রের এই উল্লাস শুনে খুশি হয়ে ভাবলাম – আহা, একে বঙ্গসন্তান, তার ওপর এখন আবার বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ উৎসব চলছে। এমন দিনে চিংড়িমাছের মালাইকারির এমন উচ্চারণ ? আমি অন্তত ওর উচ্চারণটা ঠিক করে দিই।

আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে পৃথিবীতে কোনো ভালোকাজই খুব সহজে হয়না, কিছু না কিছু *conditions apply জাতীয় ব্যাপার ঢুকে খানিকটা ফ্যাঁকড়া বাঁধবেই । অতএব এরপর যা শুরু হল, তাতে পুত্রের উচ্চারণ শিক্ষা কতটা হলো জানিনা, তবে আমার শিক্ষা যে ভালোরকম-ই হলো সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই …..

যাগগে, আর বেশি গৌরচন্দ্রিকা না করে এবার বলেই ফেলি কি হল।

আমি: (সোৎসাহে) বল “চিংড়িমাছের মালাইকারি”

পুত্র: “ছিংঋমাচের মামাবারি” ( সামান্য confused হয়ে… )উফ্ফ !! “মামাবাড়ি”টা কোত্থেকে পেলি? ভালো করে শোন আমি কি বললাম। আমি বললাম (এবার সামান্য ধীর গতিতে) “চিংড়িমাছের মালাইকারি”।

Oh! I thought you said মামাবারি, and that I have been saying ম্যলাইখাররি wrong all this time!
এতো তাড়াতাড়ি ধৈর্যহানি মোটেই ভালো নয়। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে আমি নরম গলায় পরম ধৈর্য নিয়ে বলি –

না বাবু, it’s not “মামাবাড়ি।”
ছেলে সামান্য অপ্রতিভ হয়েছে দেখে আমি এবার একটু উৎসাহব্যঞ্জক গলায় মুখে সামান্য হাসি নিয়ে বললাম –

Let’s try again, shall we? বল “চিংড়িমাছের মালাইকারি” (এবার বেশ কেটে কেটে)

“ছিংঋমাচের ম্যলাইখাররি” ( “ম্যলাইখাররি”-র প্রথম ‘র’ তে হসন্ত আছে ধরে নিতে হবে – আমার type করার সময় কিছুতেই হসন্ত-টা এলনা )
বুঝলাম একসাথে পুরোটা চেষ্টা করলে গন্ডগোল। তাই নতুন উদ্যমে শুরু করলাম আবার।

বল “চিংড়ি”

“ছিংঋ”

“ছিং” না, বল “চিং”, আর “ঋ” নয়, বল “ড়ি”

“ছি—-ইং, ঋ”

ওরে “ঋ” নয়, “ড়ি”, আর ‘ছ’ নয় ‘চ’। চি—-ইং, চিং।

ওখে (OK) ! (খানিক থেমে এবার) চি–ইং

এইতো হয়েছে। Good!
ভালো করে উৎসাহ দিয়ে আমি বললাম – “এবার বল ড়ি”

হলোনা, আরেকবার চেষ্টা কর, “ড়ি”

“রি–ই” ?
ছেলে approval-এর খোঁজে আমার দিকে তাকায় …..
আমি অতএব একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে মৃদু হেসে বলি, “ok, close enough.”
ছেলেও হাসে।
আমি হাল ছাড়ার পাত্রী নই – এবার তো ছেলের হাসি দেখে নিজের উচ্চারণ শেখানোর capability-র ওপর দারুণ confidence বেড়ে গেল। তাই নতুন উদ্যমে শুরু করি –

এবার বলতো, “মাছের”

“মাচের”

এতক্ষন ছিংঋ-র ‘ছ’ টাকে ‘চ’ করতে ব্যস্ত ছিলাম। এবার ‘চ’ কে ‘ছ’ করতে মাঠে নেমে পড়লাম।

“মাচের” নয়, বল “মাছের”। মা—–ছের ( ছ-এর ওপর বেশ জোর দিয়ে আমি বলি )

মাআআ—-চে—র

ছ, ছ, চ নয়। বল “ছের”
ছেলে হঠাৎ ভাবিত হয়ে ওঠে।

Mommy, didn’t you say “মাচ” means fish?

Yes, I did….? ( আমি জিজ্ঞাসু হয়ে তাকাই – ব্যাপারটা কোনদিকে গড়াচ্ছে তার আন্দাজ পাওয়ার চেষ্টা করি )

But you also said shrimps and prawns are crustaceans. And fish are aquatic vertebrates – right?

Yes, they are! And you’re right! ( ছেলের মনে আছে দেখে আমার অন্তরের Zoologist পুলকিত হয়ে ওঠে। )

Then, why are you calling them fish? They are not vertebrates! ( ছেলে বেশ serious মুখে তার বড় বড় চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকায় একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আশায় ) চিংড়িকে আমরা ঠিক কেন মাছ বলি – তার যেহেতু কোনো scientific ব্যাখ্যা নেই, এবং সবচেয়ে বড় কথা, কোনো ‘non-scientific’ ব্যাখ্যাও আমার জানা নেই, তাই আমি রণে কিছুটা ‘temporary’ ভঙ্গ দিয়ে বললাম –

Umm, we just call them fish – no reason…. really.
আমার সর্বদা scientific explanation দেওয়া মন একটু খুঁতখুঁত করে। ইচ্ছে করেই আমি আর জয়দীপ ছেলেদের ছোটবেলা থেকে এটা শুরু করেছিলাম, যাতে ওদের অনুসন্ধিৎসু মানসিকতা তৈরী হয় আর কোনো ব্যাপারে কোনো কুসংস্কার না শেখে । তার যে এমন odd একটা side-effect হবে – কে জানত?
আমার ‘বিজ্ঞানমনস্ক’ পুত্রকে ঠিকঠাক কারণ বলতে না পেরে সামান্য অপ্রস্তুত বোধ করি। যাইহোক, উচ্চারণ শিক্ষায় অর্ধেকটা শেষ করে আর বাকিটা না করলে তো চলে না। তাই বলি:

Never mind. We will get back to that later. এবার বলতো, “মালাইকারি।”

“ম্যলাইখাররি”

“ম্য” নয়, “মাআআ”

মাআ

এইতো, হয়েছে! এবার বল “মালাই”

“মালাই”

Good! এবার বল “কারি।”

খাররি

উঁহু, “কারি।”

খা-ররি

আমার frustration বাড়ে। খানিক পরে হঠাৎ deep breathing-এর মাহাত্ম্য মনে পড়ে যায় (self-preservation বড় বালাই – নিজের মেজাজ ঠিক রাখাটাও ওই “preservation”-এর মধ্যেই পড়ে )। সুতরাং বেশ deep একটা ‘breath’ নিয়ে বলি –

বল “কাআ”

“খা-আ”

ভালো করে শোন : “কা” ।

খা

“চিংড়িমাছের মালাইকারি”

“চিংড়িমাচের মালাইখারি”

ওপরের এই অংশটুকু বেশ কয়েকবার repeat telecast হওয়ার পর, আমি এবার হঠাৎ করে “realistic expectation”-এর গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য সম্যক উপলব্ধি করতে পারলাম। ছেলের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বললাম, “OK. আপাতত এতেই হবে। Good job!”

ছেলের মুখে একগাল হাসি, চোখে যুদ্ধজয়ের satisfaction….. নাচতে নাচতে খেলতে বেরিয়ে গেলো। আমি কিন্তু ক্লান্ত হয়ে গেছি – এবার দ্বিপ্রাহরিক নিদ্রা নিতে চললুম।

শুভ মহাসপ্তমী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore

পেরেন্টিং ও শিশুশিক্ষা

শিশুশিক্ষা নিয়ে কিছু চিন্তা

ফেসবুকে একটা পোস্টে একটি দুবছর বয়সী বাচ্চাকে পড়তে বসানো নিয়ে কিছু বিতর্ক / মতানৈক্য ইত্যাদি হয়েছে। যিনি পোস্ট করেছিলেন, তিনি দুটি আলাদা পোস্ট দিয়েছিলেন –