বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: আমি পেশাগতভাবে আইনজীবী নই এবং এই পোস্টে যা যা লিখেছি সেটা পেশাদার আইনজীবীদের থেকে পাওয়া legal advice কে কোনোভাবেই replace করে না।
Bullying জিনিসটার প্রতি আমার একটা intense hatred আছে। তাই এই সুদীর্ঘ পোস্ট। কিছু কথা বলা অত্যন্ত জরুরি মনে হলো তাই বলছি। গত দু-তিনদিন ধরে যাঁকে নিয়ে ফেসবুক উত্তাল, এবং যে ছেলেটির মিম দেখে তিনি এত কান্ড করলেন – আমার এই লেখা তাঁদের দুজনের জন্য তো বটেই, উপরন্তু এমন সমস্ত মিমারদের জন্য যাঁরা নির্মল হাস্যরসাত্মক মিম বানান নিছক কৌতুকের জন্য। আবারও স্পষ্ট করে বলছি, এই লেখাটা তাঁদের সকলের জন্য যাঁরা অশ্লীল বা অপমানজনক মিম বানান না এবং বানানোটা সমর্থনও করেন না।
সংশ্লিষ্ট মিমারের ক্ষমাপ্রার্থনার যে পোস্টটি ৯ই মার্চ ওই মিমারকে লিখতে হয়েছে একটি বিশেষ গ্রুপে (যেখানে আলোচ্য মিমটি originally পোস্টেড্ হয়েছিল), সেই প্রকাশিত পোস্ট অনুযায়ী তিনি কবুল করেছেন – বা বলা ভালো, ধমকিয়ে চমকিয়ে তাঁকে দিয়ে কবুল করানো হয়েছে – যে তিনি Section 67 of IPC অনুযায়ী ওই মিমটি শেয়ার করে গর্হিত অপরাধ করেছেন। এই IT Act 2000 চালু হওয়ার পর থেকে বার দুই amended হয়েছে – প্রথম 2008 সালে এবং সাম্প্রতিকতম amendmentটি হয়েছে 2021 সালে – যার সম্পূর্ণ বিবরণ গুগলে সার্চ করে পাওয়া সম্ভব। ওই বিশেষ আইনটি ঠিক কি – এটা ওই মিমার সম্ভবত একবারও দেখে নেওয়ার কথা ভাবেননি। হয়তো ওনার মনে হয়েছে এতো বড় সরকারি অফিসারের উকিলের কাছ থেকে চিঠি এসেছে মানেই একটা সাংঘাতিক ব্যাপার নিশ্চই উনি ঘটিয়ে ফেলেছেন। কাজেই মিমারটি সহজেই ভয় পেয়ে গিয়ে আগে ক্ষমা চেয়েছেন।
সম্প্রতি বোম্বে হাইকোর্টের Hon’ble জাস্টিস সন্দীপ কাশীনাথ শিন্ডে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন Section 67 or 67A of the IT Act must “operate in distinct circumstances” – এবং এটা 2021 বা 2020 সালের ঘটনা। Anyway, সেই distinct circumstances ঠিক কি, সেটা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। জাস্টিস শিন্ডে বলেছেন Section 67 (or 67A) requires the matter to be “lascivious or lewd’’ in nature and appeal to one’s “prurient interest.’’ Lascivious, lewd, বা prurient শব্দগুলির অর্থ জানা না থাকলে প্লিজ দশ সেকেন্ড সময় খরচ করে একবার গুগলে দেখে নিন – তাহলেই বুঝবেন কেন সেই মিমার ওই বিশেষ Act অনুযায়ী কোনো অপরাধ করেননি। যে মিম নিয়ে এত কান্ড হয়ে গেল সেটা যদি অশ্লীল হত, বা মিমের কন্টেন্টে যদি যে ব্যক্তিকে নিয়ে মিম বানানো হচ্ছে তাঁকে ডিফেম করার মতো কথাবার্তা থাকত, তাহলে IPC-র আরো বেশ কয়েকটি ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মিমার বিপদে পড়তেন (এবং অশ্লীল, কুরুচিকর মিম যাঁরা বানান, তাঁদের সেটাই হওয়া উচিত)। ধারাগুলি হল – Section 499, 500, 509, and maybe 292; along with Indecent Representation of Women (Prohibition) Act of 1986 and – সবকটি ধারারই যথাযথ ব্যাখ্যা ও বিবরণ অনলাইনে যথেষ্ট সহজলভ্য।
এবার কথা উঠতে পারে ছবির কপিরাইট নিয়ে। অর্থাৎ অনুমতি ছাড়া কারুর ছবি ব্যবহার করার প্রসঙ্গ যেখানে আসছে। ভারতে photograph নিশ্চই Section 2c of Copyright Act 1957 দ্বারা সুরক্ষিত – কিন্তু তারও মাত্রা আছে। এমনিতেই ভারতীয় সংবিধানের Article 19 এবং Article 21 অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে কোনো ব্যক্তির ছবি তোলা হলে সেটা “personal use” করা যায় – যতক্ষণ পর্যন্ত যার ছবি তোলা হয়েছে সেই ব্যক্তির সেই ছবির ব্যবহার কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বা অসৎ বা অশ্লীল উদ্দেশ্যে না করা হচ্ছে, এবং সেই ছবিটি যতক্ষণ না সেই ব্যক্তিকে embarrassing বা mentally traumatic কোনো পরিস্থিতিতে ফেলছে। সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু অন্যরকম। সংশ্লিষ্ট লেখিকা যেহেতু বাঙালি পাঠকসমাজে সেলিব্রিটি হিসেবে খ্যাত (লেখার কোয়ালিটি নিয়ে কথা বলছিনা এখানে – নামের পাশে নীল টিক, বই লিখে যথেষ্ট পরিমান অর্থ উপার্জন, এবং জনপ্রিয়তার নিরিখে সেলিব্রিটি বলছি), সেহেতু যে যে জায়গায় তাঁর একটা “reasonable expectation of privacy” আছে – তার বাইরে অন্য কোথাও তোলা ফটো যদি কারুর দ্বারা নির্দোষ মিম তৈরিতে ব্যবহার হয় – তবে আইনের চোখে সেটা অপরাধ নয়। সেলিব্রিটি বা সাধারণ নাগরিক সবার ক্ষেত্রেই, যদি প্রাইভেট প্রপার্টিতে ছবি তোলা হয়ে থাকে, বা প্রাইভেট অনুষ্ঠানে (যেখানে “photography is prohibited” বা “restricted” বলা আছে) সেখানে নিয়মভঙ্গ করে ছবি তোলা হয়ে থাকে, তাহলে সেই ছবি ব্যবহার করা অবশ্যই বেআইনি – তার উদ্দেশ্য যাই হোক।
আদালত সমস্ত ক্ষেত্রেই কপিরাইট ইনফ্রিঞ্জমেন্ট সংক্রান্ত অভিযোগগুলিকে case-by-case বেসিসে বিচার করে দেখে – অর্থাৎ সেখানে কন্টেন্টের পাশাপাশি কনটেক্সট এবং ইনটেন্ট ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় – যার কোনোটিই আলোচ্য মিম-এ একেবারেই খারাপ বা আপত্তিকর ছিল না। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বলব, নির্দোষ মিমাররা – অর্থাৎ যাঁরা কোনোরকম কুৎসিত, নোংরা, অশ্লীল, অপমানজনক বা অন্য কোনো ভাবে আপত্তিকর মিম বানান না, তাঁরা – যদি কখনো নির্মল হাস্যরসাত্মক মিম বানানোর পর অন্যায্যভাবে ধমকানি-চমকানির শিকার হন, তাহলে একবার IPC-র Sections 503 and 506 ধারা দুটি একটু দেখে নেবেন। আশা রাখি এতে আর কিছু হোক না হোক, সামান্য কারণে বা অকারণে তাহলে তাঁদের bullied হতে হবে না।
আর পরিশেষে বলি – মানুষমাত্রেরই lapse in judgment হয়। আমরা সব্বাই fallible জীব। তাই ইগোতে আঘাত লাগার ফলে সাময়িক ক্রোধের বশে কোনো অন্যায় আচরণ করে ফেললে তার জন্য আমরা যদি পরে ক্ষমা চাই – তাহলে আমরা কিন্তু ক্ষুদ্র বা দুর্বল প্রমাণিত হই না – বরং অন্য অনেককে সবল এবং বৃহৎ হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করি। (By the way, কারুর নাম নিতে আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধে ছিল না – কিন্তু মিমার ছেলেটির অস্বস্তি বা অসুবিধের উদ্রেক হতে পারে – তাই কারুর নাম নিলাম না।)